টিপস্

রূপচর্চার টিপস্
প্রাচীন ভারতের ২০টি বিউটি টিপস, যা ত্বক-চুল ঝলমলে করতে দৈনন্দিন রূপচর্চায় কাজে আসে আজও!
যতই চিন-কোরিয়া-জাপান-ইজিপ্ট বলে আদিখ্যেতা করুন না কেন, রূপচর্চায় আমাদের ভারতও কিছু কম যায় না! গুনে-গুনে এতগুলো বিশ্বসুন্দরীর জন্ম দিয়ে দিলুম আমরা, সেখানে চিনা-জাপানিরা ক'টা দিয়েছে শুনি? আর এত কিছু তো আর এমনি-এমনি হয়নি, বিদেশি কোম্পানির রুজ-পমেটম মেখে হয়নি, হয়েছে প্রাচীন ভারতীয় (ancient India) কিছু রূপচর্চার রহস্য (beauty secrets) মেনে। আমাদের দেশের আয়ুর্বেদ, পুরনো জড়িবুটি দিয়ে তৈরি নানা রূপটান যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তা হলেই দাগছোপহীন, ঝলমলে ত্বকের অধিকারিণী হওয়া সম্ভব। আর এই সঠিকভাবে ব্যবহারের রহস্যই আমরা ফাঁস করছি এই প্রতিবেদনে। এখানে ১০টি উপাদানের ২০টি বিউটি টিপসের কথা বলব আমরা, যেগুলি আমাদের খুবই পরিচিত, কিন্তু ত্বকের নানা সমস্যা সমাধানে প্রাচীনকাল থেকে কীভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এগুলি এবং আপনারাই বা কীভাবে সেগুলিকে নিজেদের রূপ রুটিনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করে ফেলতে পারেন, জেনে নিন এখানে...
১. মুলতানি মাটি
যাঁরা একটুআধটুও রূপচর্চা করেন, তাঁরা সকলেই মুলতানি মাটির নাম শুনেছেন। সস্তা অথচ গুণে ভরপুর এই উপাদানটি আমাদের দেশে রূপচর্চার জন্য নানা ভাবে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রাকৃতিক স্ক্রাবার এবং ক্লেনজার, আবার ফেস প্যাকের ক্যারিয়ার হিসেবেও এর ব্যবহার আছে। কিন্তু জানেন কি, ব্রণজনিত দাগ এবং কালো স্পট দূর করতে মুলতানি মাটি ব্যবহার করতেন প্রাচীন ভারতীয় সুন্দররীরা?
- ব্রণ দূর করতে মুলতানি মাটির সঙ্গে টোম্যাটোর রস, এক চিমটি হলুদ এবং সাদা চন্দনবাটা মিশিয়ে দিনে দু'বার ব্রণর উপরে লাগিয়ে রাখুন। মিনিটপনেরো-কুড়ি রেখে ধুয়ে ফেলুন।
- ত্বকে কোথাও কালো ছোপ পড়লে মুলতানি মাটির সঙ্গে পুদিনা পাতা বাটা এবং টক দই মিশিয়ে একটা পেস্ট বানান। তারপর দিনে একবার কালো ছোপের উপরে তা আধঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন।
২. টক দই
এই উপাদানটিও অনেক ঘরোয়া রূপটান তৈরিতে এবং ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজে লাগানো হয় আমাদের দেশে। টক দই আসলে জিঙ্কে ভরপুর, যা ত্বকের অনেক সমস্যায় কাজে আসে।
- চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে এক কাপ টক দইয়ে মেশান দুই টেবিলচামচ অলিভ অয়েল এবং একটি ডিম। পুরো মিশ্রণা ভাল করে ফেটিয়ে নিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন অন্তত আধঘণ্টা। একটা প্লাস্টিকের ক্যাপ পরে থাকবেন এই সময়টা। তারপর ধুয়ে ফেলুন। রেশমের মতো নরম চুল দেখে নিজেই চমকে যাবেন।
৩.চন্দন গুঁড়ো অথবা বাটা
নানা ধরনের ফেস প্যাক থেকে শুরু করে মুখের দাগছোপ দূর করতে চন্দনবাটার ব্যবহারও অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। সাদা এবং লাল, দুই ধরনের চন্দনই রূপচর্চার কাজে লাগে। চন্দনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণের কথা তো সকলেই জানেন। এর পাশাপাশি এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালনও স্বাভাবিক রাখে, ফলে দূষিত রক্ত বেশিক্ষণ শরীরে থেকে ত্বকের বারোটা বাজাতে পারে না।
- মিহি করে গুঁড়ো করা আমন্ডের সঙ্গে চন্দনবাটা ও দুধ মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। স্নানের আগে এই পেস্টটি সারা শরীরে মেখে ঊষ্ণ গরম জলে স্নান করে নিন। নিয়মিত করতে পারলে ত্বকের অনেক সমস্যা থেকে বরাবরের মতো মুক্তি পাবেন
৪. মধু
মধু খেতে ভাল, লাগাতে ভাল, পকেটের পক্ষেও ভাল। অবশ্য আজকাল বাজারে নানা কোয়ালিটির মধু পাওয়া যায়, যেগুলির মধ্যে খাঁটি মধু কোনটা, সেই সম্পর্কে আগে থেকে জেনেবুঝে নেবেন। মধু ত্বককে আর্দ্র রাখে দীর্ঘক্ষণ। এটি ফেস প্যাকের ক্যারিয়ার হিসেবেও ভাল কাজ করে।
- কোথাও পুড়ে গেলে বা পোড়া দাগ থাকলে, সেখানে মধু লাগান নিয়মিত। আস্তে-আস্তে দাগ মিলিয়ে যাবে।
- মধু, দুধের সর, চন্দন আর বেসন একসঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। সেটা ফেস প্যাক হিসেবে মুখে লাগান। শুকিয়ে চড়চড় করলে ধুয়ে ফেলবেন। নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে ত্বক হয়ে উঠবে নিখুঁত।
৫. বেসন
এই বেসন হচ্ছে এমন একটি উপাদান, যা দিয়ে ত্বকের বিভিন্ম সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ত্বক উজ্জ্বল (glowing skin) করতে, ট্যান দূর করতে, ত্বকে জমা মরা কোষ দূর করতেও বেসনের জু়ড়ি মেলা ভার। দেখে নিন, প্রাচীন ভারতে আরও কী-কী ভাবে এই উপাদানটিকে কাজে লাগানো হত রূপচর্চায়...
- রোদে পোড়া জায়গার উপর বেসন আর শসার রস মিশিয়ে লাগান। কয়েকদিনের মধ্যেই পোড়া ভাব চলে যাবে।
- দুই টেবিলচামচ বেসনের সঙ্গে মেশান চার-পাঁচটা কাঠবাদামগুঁড়ো, লেবুর রস ও অল্প দুধ। এই পেস্টটি সারা মুখে ভাল করে থুপে-থুপে লাগান। আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। কিছুদিন নিয়মিত করতে পারলেই দেখবেন, ত্বক ঝলমলে, দাগছোপহীন হয়ে গিয়েছে।
৬. আমলকী
আমলকী, রিঠা, শিকাকাই, চুলের যত্নে এই তিনটি ভারতীয় উপাদানের কথা আমরা সকলেই জানি। তার মধ্যে আমলা আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটিই আসল ক্যারিয়ার। আমলকী ভিটামিন সি-এর গুণে ভরপুর, যা চুলের নানা সমস্যার চটজলদি সমাধান করতে সক্ষম।
- চুল পড়া কমাতে প্রতিদিন স্নানের আগে দুই চা চামচ আমলকীর রসের সঙ্গে একটা পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া কমবেই।
- চুলে বাড়তি পুষ্টি জোগাতে চাইলে একটি লোহার পাত্রে জলের মধ্যে আমলকী, রিঠা ও শিকাকাই একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। সেই জলটা মাথায় কিছুক্ষণ লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল হবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
৭. তুলসি পাতা
ভগবান নারায়ণের সঙ্গে তুলসির বিয়েও হয়েছিল। তাই তুলসি পবিত্র। তুলসি পাতা পুজোয় লাগে। কিন্তু রূপচর্চাতেও প্রাচীনকালে তুলসিপাতা ব্যবহার করা হত। এই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ত্বকের নানা সমস্যা দূর করতে কাজে আসে।
- কয়েকটি তুলসি পাতা থেঁতো করে নিন। তাতে মেশান অল্প দুধ। এই পেস্টটি লাগান ব্রণর উপরে। দু'-একদিনেই ব্রণ শুকিয়ে যাবে!
- তুলসি পাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এর সঙ্গে মেশান কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো। এই মিশ্রণটি দাঁতে লাগিয়ে মাজনের মতো মেজে নিন। দাঁতের হলুদ ছোপ দূর হবে কিছুদিনের মধ্যেই।
৮. জাফরান
সত্যি কথা বলতে গেলে, এটি একটি লাক্সারি জড়িবুটি। কারণ, জাফরান বেশ মহার্ঘ্য। তবে একটি লাগেও এক চিমটি। কারও ত্বক ঝলমলে করে তুলতে জাফরান এতটাই উপকারী যে একটু বেশি পয়সা খরচ করেও এটি ছোট এক শিশি কিনে বাড়িতে রেখে দিন।
- দুধের সরের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে উঠে সারা মুখে লাগিয়ে নিন। রোদে পোড়া ভাব কেটে যাবে তাড়াতাড়ি।
- যাঁরা আনইভন স্কিন টোনের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা গোলাপ জলে জাফরান মিশিয়ে একটি তুলো সেই তরলে ভিজিয়ে নিয়ে সারা মুখে থুপে-থুপে লাগান। তারপর বাকি মিশ্রণের সঙ্গে মেশান চন্দনবাটা। সেটিকে মুখে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। ত্বকের রংয়ের তারতম্য কেটে যাবে।
৯. হলুদ
হলুদের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের কথা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু জানেন কি, প্রাচীন ভারতে ফাটা গোড়ালি সারাতে, বলিরেখা কমাতে ও স্ট্রেচ মার্কস দূর করতেও ব্যবহার করা হত এটি?
- স্ট্রেচ মার্কস কমাতে হলুদবাটা, বেসন ও টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে লাগান।
- ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে হলুদবাটা মিশিয়ে ফাটা গোড়ালিতে লাগান।
- চালের গুঁড়ো, কাঁচা দুধ, টোম্যাটোর রস এবং কাঁচা হলুদবাটা একসঙ্গে মিশিয়ে লাগান বলিরেখা কম করার জন্য।
১০. নিমপাতা
নিমপাতা খেতে তেতো হতে পারে, কিন্তু আপনার ত্বকের দেখভালে এটি অমৃতের মতো কাজ করে! যদি কোনওভাবে নিমপাতাটি রোজ ত্বকের দেখভালে কাজে লাগাতে পারেন, তা হলে ত্বক নিয়ে আপনার আর কোনও সমস্যাই থাকবে না।
- জলে কয়েকটি নিমপাতা ফেলে তা কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। পাতাগুলি ছেঁকে নিয়ে বাকি জলটা একটি শিশিতে ভরে রাখুন। রোজ তাতে তুলো ডুবিয়ে দিনে একবার সারা মুখে লাগিয়ে নিন। ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা শতকার ৮০ ভাগ কমে যাবে।
- নিমপাতা ও টক দই কিংবা নিমপাতা ও শসা একসঙ্গে মিশিয়ে ফেস প্যাক হিসেবেও মুখে লাগাতে পারেন। এতে মুখের তেলতেলে ভাব কেটে যাবে।